Rabindra Sangeet Albums. Sung by the verified singers of this website. 160 talented singers & over 850 songs.
Rabindra Sangeet Collections. Sung by the verified singers of this website. Nearly 500 unique Tagore songs.
Detail information about Rabindra Sangeet. All the lyrics, notations, background history with detail musical compositions, English translation and many more.
প্রথম সংস্করণের বিজ্ঞাপন
সখীসমিতির মহিলাশিল্পমেলায় অভিনীত হইবার উপলক্ষে এই গ্রন্থ উক্ত সমিতি কর্তৃক মুদ্রিত হইল। ইহাতে সমস্তই কেবল গান, পাঠোপযোগী কবিতা অতি অল্প। মাননীয়া শ্রীমতী সরলা রায়ের অনুরোধে এই নাট্য রচিত হইল এবং তাঁহাকেই সাদর উপহার - স্বরূপে সমর্পণ করিলাম। ইহার আখ্যানভাগ কোনো সমাজবিশেষে দেশবিশেষে বদ্ধ নহে। সংগীতের কল্পরাজ্যে সমাজনিয়মের প্রাচীর তুলিবার আবশ্যক বিবেচনা করি নাই। কেবল বিনীত ভাবে ভরসা করি, এই গ্রন্থে সাধারণ মানব-প্রকৃতিবিরুদ্ধ কিছু নাই। আমার পূর্বরচিত একটি অকিঞ্চিৎ কর গদ্যনাটিকার সহিত এই গ্রন্থের কিঞ্চিৎ সাদৃশ্য আছে। পাঠকেরা ইহাকে তাহারই সংশোধন-স্বরূপে গ্রহণ করিলে বাধিত হইব। এই গ্রন্থের তিনটি গান ইতিপূর্বে আমার অন্য কাব্যে প্রকাশিত হইয়াছে। পাঠক ও দর্শকদিগকে বুঝিতে হইবে যে, মায়াকুমারীগণ এই কাব্যের অন্যান্য পাত্রগণের দৃষ্টি বা শ্রুতি গোচর নহে। এই নাট্যকাব্যের সংক্ষিপ্ত আখ্যায়িকা পরপৃষ্ঠায় বিবৃত হইল। নতুবা বিচ্ছিন্ন গানের মধ্য হইতে ইহার আখ্যান সংগ্রহ করা সহসা পাঠকদের পক্ষে দুরূহ বোধ হইতে পারে।
প্রথম দৃশ্যে মায়াকুমারীগণের আবির্ভাব। মায়াকুমারীগণ কুহকশক্তিপ্রভাবে মানবহৃদয়ে নানাবিধ মায়া - সৃজন করে। হাসি, কান্না, মিলন, বিরহ, বাসনা, লজ্জা, প্রেমের মোহ এই-সমস্ত মায়াকুমারীদের ঘটনা। একদিন নব বসন্তের রাত্রে তাহারা স্থির করিল, প্রমোদপুরের যুবক-যুবতীদের নবীন হৃদয়ে নবীন প্রেম রচনা করিয়া তাহারা মায়ার খেলা খেলিবে।
নবযৌবনবিকাশে গ্রন্থের নায়ক অমর সহসা হৃদয়ের মধ্যে এক অর্পূব আকাঙ্ক্ষা অনুভব রিতেছে। সে উদাসভাবে জগতে আপন মানসী মূর্তির অনুরূপ প্রতিমা খুঁজিতে বাহির হইতেছে। এ দিকে শান্তা আপন প্রাণমন অমরকেই সমর্পণ করিয়াছে। কিন্তু চিরদিন নিতান্ত নিকটে থাকাতে শান্তার প্রতি অমরের প্রেম জন্মিতে অবসর পায় নাই। অমর শান্তার হৃদয়ের ভাব না বুঝিয়া চলিয়া গেল। মায়াকুমারীগণ পরিহাসচ্ছলে গাহিল – কাছে আছে দেখিতে না পাও, কাহার সন্ধানে দূরে যাও!
প্রমদার কুমারীহৃদয়ে প্রেমের উন্মেষ হয় নাই। সে কেবল মনের আনন্দে হাসিয়া খেলিয়া বেড়ায়। সখীরা ভালোবাসার কথা বলিলে সে অবিশ্বাস করিয়া উড়াইয়া দেয়। অশোক ও কুমার তাহার নিকটে আপন প্রেম ব্যক্ত করে, কিন্তু সে তাহাতে ভ্রূক্ষেপ করে না। মায়াকুমারীগণ হাসিয়া বলিল, তোমার এ গর্ব চিরদিন থাকিবে না।
প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে, কে কোথা ধরা পড়ে কে জানে। গরব সব হায় কখন টুটে যায়, সলিল বহে যায় নয়নে।
অমর পৃথিবী খুঁজিয়া কাহারো সন্ধান পাইল না। অবশেষে প্রমদার ক্রীড়াকাননে আসিয়া দেখিল, প্রমদার প্রেমলাভে অকৃতার্থ হইয়া অশোক আপন মর্মব্যথা পোষণ করিতেছে । অমর বলিল, যদি ভালোবাসিয়া কেবল কষ্টই সার তবে ভালোবাসিবার প্রয়োজন কী ? কেন যে লোকে সাধ করিয়া ভালোবাসে অমর বুঝিতেই পারিল না। এমন সময়ে সখীদের লইয়া প্রমদা কাননে প্রবেশ করিল। প্রমদাকে দেখিয়া অমরের মনে সহসা এক নূতন আনন্দ নূতন প্রাণের সঞ্চার হইল। প্রমদা দেখিল আর-সকলেই তৃষিত ভ্রমরের ন্যায় তাহার চারিদিকে ফিরিতেছে, কেবল অমর একজন অপরিচিত যুবক দূরে দাঁড়াইয়া আছে। সে আকৃষ্টহৃদয়ে সখীদিগকে বলিল, ‘উহাকে একবার জিজ্ঞাসা করিয়া আয় ও কী চায়। ‘সখীদের প্রশ্নের উত্তরে অমরের অনতিস্ফুট হৃদয়ের ভাব স্পষ্ট ব্যক্ত হইল না। সখীরা কিছু বুঝিল না। কেবল মায়াকুমারীগণ বুঝিল এবং গাহিল–
প্রেমপাশে ধরা পড়েছে দুজনে, দেখো দেখো সখী চাহিয়া। দুটি ফুল খসে ভেসে গেল ওই প্রণয়ের স্রোত বাহিয়া।
অমরের মনে ক্রমে প্রমদার প্রতি প্রেম প্রবল হইয়া উঠিতে লাগিল। প্রমদারও হৃদয়ের ব্যাকুলতা বাড়িয়া উঠিল, বাহিরের চঞ্চলতা দূর হইয়া গেল। সখীরা প্রমাদার অবস্থা বুঝিতে পারিল। কিন্তু পূর্বদৃশ্যে অমরের অস্পষ্ট উত্তর এবং ভাবগতিক দেখিয়া অমরের প্রতি সখীদের বিশ্বাস নাই। এবং সখীদের নিকট হইতে সখীর হৃদয় হরণ করিয়া লইতেছে জানিয়া অমরের প্রতি হয়তো অলক্ষ্যে তাহাদের ঈষৎ মৃদু বিদ্বেষের ভাবও জন্মিয়াছে। অমর যখন প্রমদার নিকট আপনার প্রেম ব্যক্ত করিল প্রমদা কিছু বলিতে না বলিতে সখীরা তাড়াতাড়ি আসিয়া অমরকে প্রচুর ভর্ৎ সনা করিল। সরলহৃদয় অমর প্রকৃত অবস্থা কিছু না বুঝিয়া হতাশ্বাস হইয়া ফিরিয়া গেল। ব্যাকুলহৃদয়ে প্রমদা লজ্জায় বাধা দিবার অবসর পাইল না। মায়াকুমারীগণ গাহিল–
নিমেষের তরে শরমে বাধিল, মরমের কথা হল না। জনমের তরে তাহারি লাগিয়ে রহিল হৃদয়বেদনা।
অমরের অসুখী অশান্ত আশ্রয়হীন হৃদয় সহজেই শান্তার প্রতি ফিরিল। এই দীর্ঘ বিরহে এবং অন্য সকলের প্রেম হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া অমর শান্তার প্রতি নিজের এবং নিজের প্রতি শান্তার অচ্ছেদ্য গূঢ় বন্ধন অনুভব করিবার অবসর পাইল। শান্তার নিকটে আসিয়া আত্মসমর্পণ করিল। এদিকে প্রমদার সখীরা দেখিল অমর আর ফিরে না, তাহারা প্রত্যাশা করিয়াছিল বাধা পাইয়া অমরের প্রেমানল দ্বিগুণ প্রজ্বলিত হইয়া উঠিবে। তাহাতে নিরাশ হইয়া তাহারা নানা কথার ছলে অমরকে আহবান করিতে লাগিল–অমর ফিরিল না; সখীদের ইঙ্গিত বুঝিতেই পারিল না। ভগ্নহৃদয়া প্রমদা অমরের প্রেমের আশা একেবারেই পরিত্যাগ করিল। মায়াকুমারীগণ গাহিল–
বিদায় করেছ যাবে নয়নজলে, এখন ফিরাবে তারে কিসের ছলে।
শান্তা ও অমরের মিলনোৎ সবে পুরনারীগণ কাননে সমাগত হইয়া আনন্দ-গান গাহিতেছে। অমর যখন পুষ্পমালা লইয়া শান্তার গলে আরোপণ করিতে যাইতেছে এমন সময় ম্লান ছায়ার ন্যায় প্রমদা কাননে প্রবেশ করিল। সহসা অনপেক্ষিত ভাবে উৎ সবের মধ্যে বিষাদপ্রতিমা প্রমদার নিতান্ত করুণ দীন ভাব অবলোকন করিয়া নিমেষের মতো আত্মবিস্মৃত অমরের হস্ত হইতে পুষ্পমালা খসিয়া পড়িয়া গেল। উভয়ের এই অবস্থা দেখিয়া শান্তা ও আর সকলের মনে বিশ্বাস হইল যে, অমর ও প্রমদার হৃদয় গোপনে প্রেমের বন্ধনে বাঁধা আছে। তখন শান্তা ও সখীগণ অমর ও প্রমদার মিলনসংঘটনে প্রবৃত্ত হইল। প্রমদা কহিল, ‘আর কেন! এখন বেলা গিয়াছে, খেলা ফুরাইয়াছে, এখন আর আমাকে কেন! এখন এ মালা তোমরা পরো, তোমরা সুখে থাকো।অমর শান্তার প্রতি লক্ষ্য করিয়া কহিল, ‘আমি মায়ার চক্রে পড়িয়া আপনার সুখ নষ্ট করিয়াছি এখন আমার এই ভগ্ন সুখ এই ম্লান মালা কাহাকে দিব, কে লইবে ?' শান্তা ধীরে ধীরে কহিল, ‘আমি লইব। তোমার দুঃখের ভার আমি বহন করিব। তোমার সাধের ভুল প্রেমের মোহ দূর হইয়া জীবনের সুখ-নিশা অবসান হইয়াছে – এই ভুলভাঙা দিবালোকে তোমার মুখের দিকে চাহিয়া আমার হৃদয়ের গভীর প্রশান্ত সুখের কথা তোমাকে শুনাইব।অমর ও শান্তার এইরূপে মিলন হইল। প্রমদা শূন্য হৃদয় লইয়া কাঁদিয়া চলিয়া গেল। মায়াকুমারীগণ গাহিল–
এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম , প্রেম মিলে না, শুধু সুখ চলে যায় , – এমনি মায়ার ছলনা।
Visit the following links for detail information. More will come soon.