Rabindra Sangeet Albums. Sung by the verified singers of this website. 160 talented singers & over 850 songs.
Rabindra Sangeet Collections. Sung by the verified singers of this website. Nearly 500 unique Tagore songs.
Detail information about Rabindra Sangeet. All the lyrics, notations, background history with detail musical compositions, English translation and many more.
কানন
অমর, কুমার ও অশোক
অমর । মিছে ঘুরি এ জগতে কিসের পাকে, মনের বাসনা যত মনেই থাকে ॥ বুঝিয়াছি এ নিখিলে চাহিলে কিছু না মিলে, এরা, চাহিলে আপন মন গোপনে রাখে । এত লোক আছে, কেহ কাছে না ডাকে ॥
অশোক । তারে দেখাতে পারি নে কেন প্রাণ খুলে গো । কেন বুঝাতে পারি নে হৃদয়বেদনা ॥ কেমনে সে হেসে চলে যায়, কোন্ প্রাণে ফিরেও না চায়, এত সাধ এত প্রেম করে অপমান ॥ এত ব্যথাভরা ভালোবাসা, কেহ দেখে না— প্রাণে গোপনে রহিল । এ প্রেম কুসুম যদি হত, প্রাণ হতে ছিঁড়ে লইতাম, তার চরণে করিতাম দান, বুঝি সে তুলে নিত না, শুকাত অনাদরে— তবু তার সংশয় হত অবসান ॥
কুমার । সখা, আপন মন নিয়ে কাঁদিয়ে মরি পরের মন নিয়ে কী হবে । আপন মন যদি বুঝিতে নারি পরের মন বুঝে কে কবে ॥
অমর । অবোধ মন লয়ে ফিরি ভবে, বাসনা কাঁদে প্রাণে হা হা রবে— এ মন দিতে চাও দিয়ে ফেলো কেন গো নিতে চাও মন তবে ॥ স্বপনসম সব জানিয়ো মনে, তোমার কেহ নাই এ ত্রিভুবনে— যে জন ফিরিতেছে আপন আশে তুমি ফিরিছ কেন তাহার পাশে । নয়ন মেলি শুধু দেখে যাও, হৃদয় দিয়ে শুধু শান্তি পাও ।
কুমার । তোমারে মুখ তুলে চাহে না যে, থাক্ সে আপনার গরবে ॥
অশোক । আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান । প্রাণের আশা ছেড়ে সঁপেছি প্রাণ ॥ যতই দেখি তারে ততই দহি, আপন মনোজ্বালা নীরবে সহি, তবু পারি নে দূরে যেতে, মরিতে আসি— লই গো বুক পেতে অনলবাণ ॥ যতই হাসি দিয়ে দহন করে, ততই বাড়ে তৃষা প্রেমের তরে, প্রেম-অমৃতধারা ততই যাচি যতই করে প্রাণে অশনি দান ॥
অমর । ভালোবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন— তবে কেন মিছে ভালোবাসা ।
অশোক । মন দিয়ে মন পেতে চাহি ।
অমর ও কুমার । ওগো, কেন— ওগো, কেন মিছে এ দুরাশা ॥
অশোক । হৃদয়ে জ্বালায়ে বাসনার শিখা, নয়নে সাজায়ে মায়ামরীচিকা, শুধু ঘুরে মরি মরুভূমে ।
অমর ও কুমার । ওগো, কেন— ওগো, কেন মিছে এ পিপাসা ॥
অমর । আপনি যে আছে আপনার কাছে, নিখিল জগতে কী অভাব আছে । আছে মন্দ সমীরণ, পুষ্পবিভূষণ, কোকিলকূজিত কুঞ্জ ।
অশোক । বিশ্বচরাচর লুপ্ত হয়ে যায়, এ কী ঘোর প্রেম অন্ধ রাহুপ্রায় জীবন যৌবন গ্রাসে ।
অমর ও কুমার । ওগো, কেন— তবে কেন মিছে এ কুয়াশা ॥
মায়াকুমারীগণ । দেখো চেয়ে, দেখো ঐ কে আসিছে ! চাঁদের আলোতে কার হাসি হাসিছে । হৃদয়দুয়ার খুলিয়ে দাও, প্রাণের মাঝারে তুলিয়ে লও, ফুলগন্ধ সাথে তার সুবাস ভাসিছে ॥
প্রমদা ও সখীগণের প্রবেশ
প্রমদা । সুখে আছি সুখে আছি, সখা, আপন মনে ।
প্রমদা ও সখীগণ । কিছু চেয়ো না, দূরে যেয়ো না— শুধু চেয়ে দেখো, শুধু ঘিরে থাকো কাছাকাছি ।
প্রমদা । সখা, নয়নে শুধু জানাবে প্রেম, নীরবে দিবে প্রাণ, রচিয়া ললিত মধুর বাণী আড়ালে গাবে গান । গোপনে তুলিয়া কুসুম গাঁথিয়া রেখে যাবে মালাগাছি ।
প্রমদা ও সখীগণ । মন চেয়ো না, শুধু চেয়ে থাকো, শুধু ঘিরে থাকো কাছাকাছি ।
প্রমদা । মধুর জীবন, মধুর রজনী, মধুর মলয়বায় । এই মাধুরী-ধারা বহিছে আপনি, কেহ কিছু নাহি চায় । আমি আপনার মাঝে আপনি হারা, আপন সৌরভে সারা, যেন আপনার মন আপনার প্রাণ আপনারে সঁপিয়াছি ।
অশোক । ভালোবেসে দুখ সেও সুখ, সুখ নাহি আপনাতে ।
প্রমদা ও সখীগণ । না না না, সখা, মোরা ভুলি নে ছলনাতে ।
কুমার । মন দাও দাও, দাও সখী, দাও পরের হাতে ।
প্রমদা ও সখীগণ । না না না, সখা, মোরা ভুলি নে ছলনাতে ।
অশোক । সুখের শিশির নিমেষে শুকায়, সুখ চেয়ে দুখ ভালো— আনো সজল বিমল প্রেম ছলছল নলিননয়নপাতে ।
প্রমদা ও সখীগণ । না না না, সখা, মোরা ভুলি নে ছলনাতে ।
কুমার । রবির কিরণে ফুটিয়া নলিনী আপনি টুটিয়া যায়, সুখ পায় তায় সে । চির কলিকাজনম, কে করে বহন চির শিশিররাতে ।
প্রমদা ও সখীগণ । না না না, সখা, মোরা ভুলি নে ছলনাতে ॥
অমর । ওই কে গো হেসে চায়, চায় প্রাণের পানে । গোপনে হৃদয়তলে কী জানি কিসের ছলে আলোক হানে । এ প্রাণ নূতন করে কে যেন দেখালে মোরে, বাজিল মরমবীণা নূতন তানে ॥ এ পুলক কোথা ছিল, প্রাণ ভরি বিকশিল— তৃষা-ভরা তৃষা-হরা এ অমৃত কোথা ছিল ! কোন্ চাঁদ হেসে চাহে, কোন্ পাখি গান গাহে, কোন্ সমীরণ বহে লতাবিতানে ॥
প্রমদা । দূরে দাঁড়ায়ে আছে, কেন আসে না কাছে । ওলো যা, তোরা, যা সখী, যা শুধা গে, ওই আকুল অধর আঁখি কী ধন যাচে ॥
সখীগণ । ছী, ওলো ছী, হল কী, ওলো সখী ! প্রথমা । লাজবাঁধ কে ভাঙিল, এত দিনে শরম টুটিল ! তৃতীয়া । কেমনে যাব, কী শুধাব । প্রথমা । লাজে মরি, কী মনে করে পাছে ।
প্রমদা । ওলো যা, তোরা যা সখী, যা শুধা গে, ওই আকুল অধর আঁখি কী ধন যাচে ॥
মায়াকুমারীগণ । প্রেমপাশে ধরা পড়েছে দুজনে দেখো দেখো সখী, চাহিয়া— দুটি ফুল খসে ভেসে গেল ওই প্রণয়ের স্রোত বাহিয়া ॥
অমরের প্রতি
সখীগণ । ওগো, দেখি, আঁখি তুলে চাও— তোমার চোখে কেন ঘুমঘোর ।
অমর । আমি কী যেন করেছি পান— কোন্ মদিরারসভোর । আমার চোখে তাই ঘুমঘোর ।
সখীগণ । ছি ছি ছী ।
অমর । সখী, ক্ষতি কী ! এ ভবে কেহ জ্ঞানী অতি, কেহ ভোলামন, কেহ সচেতন, কেহ অচেতন— কাহারো নয়নে হাসির কিরণ কাহারো নয়নে লোর— আমার চোখে শুধু ঘুমঘোর ।
সখীগণ । সখা, কেন গো অচলপ্রায় হেথা দাঁড়ায়ে তরুছায় ।
অমর । সখী, অবশ হৃদয়ভারে, চরণ চলিতে নাহি চায়, তাই দাঁড়ায়ে তরুছায় ।
সখীগণ । ছি ছি ছী ।
অমর । সখী, ক্ষতি কী । এ ভবে কেহ পড়ে থাকে, কেহ চলে যায়, কেহ বা আলসে চলিতে না চায়, কেহ বা আপনি স্বাধীন, কাহারো চরণে পড়েছে ডোর । কাহারো নয়নে লেগেছে ঘোর ॥
সখীগণ । ওকে বোঝা গেল না— চলে আয়, চলে আয় । ও কী কথা যে বলে সখী, কী চোখে যে চায় ! চলে আয়, চলে আয় ॥ লাজ টুটে শেষে মরি লাজে, মিছে কাজে, ধরা দিবে না যে, বলো কে পারে তায় । আপনি সে জানে তার মন কোথায় । চলে আয়, চলে আয় ॥
প্রস্থান
মায়াকুমারীগণ । প্রেম-পাশে ধরা পড়েছে দু-জনে, দেখো দেখো, সখী, চাহিয়া দুটি ফুল খসে ভেসে গেল ওই, প্রণয়ের স্রোত বাহিয়া । চাঁদিনী যামিনী, মধু সমীরণ, আধো ঘুমঘোর, আধো জাগরণ, চোখোচোখি হতে ঘটালে প্রমাদ কুহুস্বরে পিক গাহিয়া— দেখো দেখো সখী চাহিয়া ।
Visit the following links for detail information. More will come soon.